

বুধবার ● ৮ অক্টোবর ২০২৫
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়ে পেলেন নোবেল
যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়ে পেলেন নোবেল
হাকিকুল ইসলাম খোকন, নিউজ এ্যাডভান্স
যুক্তরাষ্ট্র : চলতি বছর পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন-জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. ডেভোরেট এবং জন এম. মার্টিনিস।গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে।খবর আইবিএননিউজ ।
বৈদ্যুতিক বর্তনীর মধ্যে স্থূল কোয়ান্টাম যান্ত্রিক টানেলিং এবং শক্তির কোয়ান্টাইজেশন আবিষ্কারের জন্য তাদেরকে এই সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস জানিয়েছে, এই আবিষ্কার কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আর এর পুরস্কার স্বরূপ তাদের নোবেলে ভূষিত করা হয়েছে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অদ্ভুত এবং সাধারণত ক্ষুদ্রাতীত কণার আচরণগুলো কীভাবে আমাদের পরিচিত বড় আকারের মানব-সৃষ্ট বস্তু বা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে সেটি এ বছরের পদার্থে নোবেল পুরস্কারের বিষয় ছিল।
পুরস্কারপ্রাপ্ত এ তিন বিজ্ঞানী তাদের ধারাবাহিক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, যে এই ঘটনাটি সম্ভব। তারা এমন একটি অতিপরিবাহী বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা তৈরি করেন, যা একটি অবস্থা থেকে সরাসরি অন্য অবস্থায় ‘টানেল’ করে যেতে পারে। বিষয়টি দেখে মনে হয় যেন একটি জিনিস দেওয়ালের মধ্যে দিয়ে ভেদ করে চলে গেছে।
তারা আরও দেখিয়েছেন যে এই ব্যবস্থাটি নির্দিষ্ট মাত্রার বা সুনির্দিষ্ট ‘ডোজ’-এ শক্তি শোষণ করে এবং বিকিরণ করে। যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে পুরোপুরি মিলে যায়।
কোয়ান্টাম কণার কিছু অদ্ভুত আচরণ প্রসঙ্গ
সুপারপজিশন (Superposition): কোয়ান্টাম কণারা একই সময়ে একাধিক সম্ভাব্য অবস্থায় থাকতে পারে। অনেকটা যেন একটি কণা একই সাথে দুটি ভিন্ন স্থানে উপস্থিত থাকতে পারে।
কোয়ান্টাম টানেলিং (Quantum Tunneling): প্রচলিত পদার্থবিদ্যায় কণা শক্তিদায়ী বাধার মধ্য দিয়ে যেতে পারে না, কিন্তু কোয়ান্টাম জগতে ইলেকট্রনের মতো ক্ষুদ্র কণাগুলো একটি বাধার মধ্য দিয়ে ‘টানেল’ করে যেতে পারে।
কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট (Quantum Entanglement): দুটি কণা যখন ‘জড়িয়ে’ বা ‘এন্ট্যাঙ্গলড’ হয়, তখন তারা একে অপরের থেকে যতই দূরে থাকুক না কেন, একটি কণার অবস্থা অন্যটির অবস্থার উপর তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। এটি যেন একটি সংযোগ, যা কোনো সংস্পর্শ ছাড়াই কাজ করে।
তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা (Wave-Particle Duality): কোয়ান্টাম কণাগুলো, যেমন ইলেকট্রন, কখনও কখনও কণার মতো আচরণ করে এবং কখনও কখনও তরঙ্গের মতো আচরণ করে। তারা একে অপরের সাথে ‘হস্তক্ষেপ’ করতে পারে, যা তরঙ্গ তৈরি করে।
এই আচরণগুলো আমাদের বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, কারণ কোয়ান্টাম বলবিদ্যা অতি ক্ষুদ্র জগতের (যেমন পরমাণু ও ইলেকট্রন) আচরণ ব্যাখ্যা করে, যেখানে সাধারণ বলবিদ্যার নিয়ম প্রযোজ্য হয় না।
কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট আমাদের যা শেখায়
এক কণিকায় যা ঘটে, অন্য কণিকা-even যদি আলোকবর্ষ দূরেও থাকে-সঙ্গে সঙ্গে “জেনে যায়”।
একটা সহজ উদাহরণ
ধরা যাক, দুটি ইলেকট্রন তৈরি হলো এমনভাবে যে, একটির spin = up হলে অন্যটির spin = down হয়।
এখন যদি আমরা এক ইলেকট্রনের spin মাপি এবং পাই “up”,
তাহলে মুহূর্তের মধ্যে-দ্বিতীয়টি, যত দূরেই থাকুক না কেন-”down” অবস্থায় চলে যাবে।
এটা ঘটে আলোর বেগেরও দ্রুততায়, যেন তথ্য “তাৎক্ষণিকভাবে” পৌঁছে যাচ্ছে।
এই ঘটনাই আইনস্টাইনকে অবাক করেছিল।
আইনস্টাইনের মতামত
আইনস্টাইন একে বলেছিলেন
“Spooky action at a distance” (দূরত্বে ঘটে যাওয়া ভৌতিক কাজ)।
তিনি বিশ্বাস করতেন, এখানে নিশ্চয়ই কোনো গোপন ভ্যারিয়েবল (hidden variable) আছে,
যা আমরা এখনো ধরতে পারিনি।
কিন্তু পরবর্তীকালের পরীক্ষায় (বিশেষ করে Bell’s Theorem ও Aspect’s Experiment) প্রমাণিত হয় যে-
এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট সত্যিই বাস্তব এবং কোনো গোপন ভ্যারিয়েবল নেই।
কীভাবে এটি প্রমাণিত হয়
১৯৮০-এর দশকে ফরাসি পদার্থবিদ Alain Aspect এবং পরবর্তীতে আরও অনেক গবেষক দেখিয়েছেন যে-
দুটি কণিকা পরস্পর থেকে অনেক দূরে থাকলেও, তাদের আচরণ একইসাথে পরিবর্তিত হয়।
এতে বোঝা যায়-এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তব ঘটনা।
এন্ট্যাঙ্গলমেন্টের প্রয়োগ
এই রহস্যময় ঘটনাকে এখন কাজে লাগানো হচ্ছে-
Quantum Computing - কণিকাদের এন্ট্যাঙ্গল অবস্থা ব্যবহার করে অসীম গতিতে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ।
Quantum Cryptography - হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব এমন নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
Quantum Teleportation - তথ্য (বা কণিকার অবস্থা) এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পাঠানোর পরীক্ষা।
রহস্য কোথায়
রহস্য হলো -
এই “তাৎক্ষণিক সংযোগ” কীভাবে হয়, যখন তথ্যের বেগ আলোর গতির চেয়েও বেশি হতে পারে না!
আজও বিজ্ঞানীরা জানেন না, এন্ট্যাঙ্গলমেন্টের মূল প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে।
তবে এটা প্রমাণিত যে, এটি প্রকৃতির এক মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
সংক্ষেপে বলা যায়,
কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলমেন্ট আমাদের শেখায় - মহাবিশ্ব আসলে গভীরভাবে “সংযুক্ত”, এমনভাবে যা আমাদের ক্লাসিক্যাল চিন্তার বাইরে।