

সোমবার ● ১৪ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকে ১০ বছর সংযুক্তিতে গাইনী বিশেষজ্ঞ
কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকে ১০ বছর সংযুক্তিতে গাইনী বিশেষজ্ঞ
ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকে প্রায় ১০ বছর সংযুক্তিতে রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী বিশেষজ্ঞ) ডা.শামছুন নাহার। স্বাস্থ্য বিভাগের একটি আদেশে তিনি ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে রয়েছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনার কারণে দীর্ঘদিন থেকে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে এ উপজেলার প্রায় ২লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়াও এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার নাজনীন আক্তার যোগদান করে অননুমোদিত ছুটি নিয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডা.শামছুন নাহার ২০১৫ সালের ২৯ জুন কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনী বিশেষজ্ঞ (জুনিয়র কনসালটেন্ট) হিসেবে যোগদান করেন। ওই বছরের ৫ই আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে পাঠায়। এরই মাঝে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই তার সংযুক্তির আদেশ বতিল হলে তিনি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। এর পর ২০১৯ সালে ৫ই মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রোকেয়া বেগমের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আবার ঢাকার তাকে কমলাপুর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে পাঠানো হয়। অদ্যবদি পর্যন্ত তিনি ওই হাসপাতালে সংযুক্তিতে রয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জেলা সিভিল সার্জন বরাবর একাধিক চিঠি চালাচালি করেও কোন কাজ হয়নি বলে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সব্য সাচি নাথ।
এ ছাড়াও এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৫শ’ থেকে ৭শ’ রোগী চিকিৎসা নেন। ৫০ শয্যার বিপরীতে ৬০ থেকে ৭০ জন পর্যন্ত ভর্তি থাকেন নিয়মিত। বিপুল সংখ্যক এই রোগীর জন্য ২১টি চিকিৎসকের পদ বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে ৯টি রয়েছে শূন্য। ফিল্ড স্টাফ ৫৩ পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ২২ টি। এছাড়া নার্স মিডওয়াইফ ২৬ টি পদের মধ্যে ২০টি পদ শূন্য এবং ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ২৭টি পদের মধ্যে ১৯টি শূন্য রয়েছে। এতে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কাজেও রয়েছে নানা বিড়ম্বনা। ৪র্থ শ্রণির গুরুত্বপূর্ণ কুক পদটিও রয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে শুন্য। ফলে রোগীদের খাবার তৈরী ও বিতরণে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম।
হাসপাতালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ (কার্ডিওলজিস্ট)। কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকে এ পদটিও শুন্য রয়েছে এবং বর্তমানে কার্ডিওগ্রাফারও নেই অনেক দিন থেকে।
সরেজমিন কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ওই হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ৩০-৩৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। এদের অধিকাংশই গাইনী রোগে আক্রান্ত। এ সময় চরলরেন্স ইউনিয়নের শিউলি বেগম (৪৬) ও চরফলকন ইউনিয়নের রোকেয়া (৫০) জানান, তলপেটের ব্যাথাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তারা এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের রোগের সঠিক কোন চিকিৎসা তারা পাচ্ছেন না। তাদের রোগের ডাক্তার নাকি এ হাসপাতালে নাই বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে সংযুক্তিতে থাকা গাইনী বিশেষজ্ঞ (জুনিয়র কনসালটেন্ট) ডা.শামছুন নাহার বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমাকে এখানে রাখা হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট এখানে প্রয়োজন মনে করেছে; তাই রাখছে । আমিতো আমার জায়গায় ফিরে যেতে চাই।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.সব্য সাচি নাথ বলেন, ডা.শামছুন নাহারের সংযুক্তির আদেশ বাতিলের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জেলা সিভিল সার্জন বরাবর একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে আমারতো কিছুই করার নেই।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা.মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।