

শনিবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপন করলেও সেবা পায়নি কেউ
কমলনগরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপন করলেও সেবা পায়নি কেউ
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : করোনা ভাইরাসের সংক্রমন থেকে বাাঁচতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপন করলেও এ পর্যন্ত কেউ সেবা পায়নি। স্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়ে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হলেও সেবা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে সুরক্ষার জন্য হাসপাতালের সামনে জীবানু নাশক ট্যানেল স্থাপন করা হলেও তা এখন কুকুরের বসতঘর। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তাহের যোগদানের পর হাসপাতারে ভিতরের গাছ বিক্রি করে প্রায় দুই লক্ষ টাকা আত্মসাত করাসহ অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সুত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চ মাসে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যোগদানের পর করোনার সংক্রমন দেখা দেয়। এ সুযোগে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.আবু তাহের উপজেলা পরিষদ হতে স্বাসকষ্ট ও করোনা রোগীদের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপনের জন্য বরাদ্দ চান। কিন্তু তখন উপজেলা পরিষদের সরকারের কোন বরাদ্দ না থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন আইসোলেশন ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থপানের জন্য স্থানীয় বিত্তশালীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য একটি ফান্ড গঠন করেন। ওই ফান্ডে প্রায় ৭লক্ষাধিক টাকা জমা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চেকের মাধ্যমে ওই টাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দেন। কথা ছিলো স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্ট্রেম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে স্থাপন করবেন। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মকর্তা টাকা পেয়ে কারো সাথে পরামর্শ না করে তাহার আগের কর্মস্থল ফেনী থেকে ইঞ্জিনিয়ার এনে তা নিজের ইচ্ছা মত স্থাপন করে উদ্বোধনের অনুমতি চান। ওই সময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটা কাটি হলেও ভার্চুয়াল মিটিংয়ে জেলা প্রশাসক তা উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে এ সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম কোন রোগীর জন্য ব্যবহার হয়নি। এখন আবার আবার সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপনের জন্য নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে হাসপাতালের বিস্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়াও তিনি যোগদানের পর সৌন্দর্য্য বর্ধ্বনের কথা বলে হাসপাতালে ভিতরে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা গাছ কেটে আত্মসাত করেছেন। তার এমন কর্মকান্ডে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্যান্য চিকিৎসক ও স্টাফরা যে যার মত করে চলছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক জানান, মামনি প্রকল্প রোগীদের একটি টিভি দিয়েছে। ওই টিভিতে রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনা হতো। ডা. আবু তাহের সার ওই টিভি নিজের কক্ষে নিয়ে গেছে। তার মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণে যে যার মত করে চলেছে এবং ফলে সেবার মান কমছে।
উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের কামরুল ইসলাম পিমন নামের এক ভুক্তভোগী জানান,তিনমাস আগে তার দাদি নুর জাহান বেগম এর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে তার দাদিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। কিন্তু তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলেও তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়নি। পরে অক্সিজেনের অভাবে তার দাদি মারা যান।
আরেক ভুক্তভোগী উপজেলার তোরাবগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন আহমেদ বাহার জনান, তার ছেলের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। কিন্তু হাসপাতাতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম থাকার পরও তারা এ সুবিদা পায়নি।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিবল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তাহের জানান, এ হাই ফ্লু অক্সিজেন একমাত্র করোনা রোগীদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে। সামান্য শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হলে এ সেবা দেওয়া যাবেনা। কারণ রোগীর ফুসফুসের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নতুনভাবে বরাদ্দ কেন চাইছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরাদ্দ আগে চাওয়া হয়েছে। নতুনভাবে কোন বরাদ্দ চাওয়া হয়নি। আর সৌন্দর্য্য বর্ধ্বনের নামে হাসপাতালের গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন ওই টাকা আত্মসাত করার কোন সুযোগ নেই।