

রবিবার ● ৪ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে খাল দখলমুক্ত করণের দাবীতে মানববন্ধন
কমলনগরে খাল দখলমুক্ত করণের দাবীতে মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ বাজার এলাকায় অবৈধভাবে খাল দখল করে দোকানঘর নির্মাণ অব্যাহত রাখার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। রোববার ( ৪ মে ) সকালে তোরাবগঞ্জ মতিরহাট সড়কের তুলাতুলি-মুসারখালের দখল হয়ে যাওয়া অংশের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে ওই এলাকার শতাধিক কৃষক ও এলাকাবাসী অংশ নেন। এসময় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য ও খাল দখল করে দোকানঘর নির্মাণ অব্যাহত রাখায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কমলনগর উপজেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা শরিফুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কমলনগর উপজেলা সভাপতি মাওলনা মোহাম্মদ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ওমর ফারুক, ছাত্রনেতা মোঃ নাঈম হোসেন, মাওলানা মাহফুজুর রহমান জাবেরী, বিএনপি কর্মী মোঃ শাহজাহান এবং কৃষক আবুল হাসেম, আবদুল মতিন প্রমুখ।
অভিযুক্ত দখলকারী ফারজানা আক্তার মতিরহাট বাজার এলাকার মরহুম আবি আবদুল্লাহর মেয়ে।
জানা যায়, গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে হঠাৎ করে তোরাবগঞ্জ পশ্চিম বাজার সংলগ্ন এলাকায় ফারজানা আক্তার খালের মধ্যখানে পিলার দিয়ে মাটি ভরাট শুরু করে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসী বাঁধার মুখে কিছুদিন তিনি কাজ বন্ধ রাখেন। কিন্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে তিনি আবার খালের মধ্যখানে সিমেন্টের পিলার ও কাঠ দিয়ে প্রায় ১০ফুট চওড়া ও ৪০ফুট লম্বা খাল দখলে নেন। তখন স্থানীয়রা উপজেলা ভূমি অফিসকে অবগত করেন। পরবর্তিতে ভূমি সার্ভেয়ার ও তহশিলতার এসে দখলে থাকা সিমেন্ট ও কাঠের সরাঞ্জম গুলো ভেঙে দখলমুক্ত করেন। এনিয়ে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রশাসন কর্তৃক দখলমুক্তকরণের সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেই ফারজানা আক্তার খালকে নিজের জায়গা দাবী করে খালের মধ্যে আবার নতুনভাবে ৪টি আরসিসি পিলার তৈরি করে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা আবারো বাঁধা দিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলে প্রশাসন কাজ বন্ধ করে দেন। এ ছাড়াও উপজেলা ভূমি অফিস গত মার্চ মাসে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ফারজানার উপস্থিতিতে খালের সীমানা মেপে দখলের অংশ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন । কিন্ত তিনি সেটাও অমান্য করে আবারো রাতের আঁধারে দোকানঘর নির্মাণ অব্যাহত রাখেন। এতে ফারজানার অবৈধ দখল অব্যাহত থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিষয়টি প্রশানের নজরে আসলে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) মোহাম্মদ আরাফাত হোছাইন গত ২৭ এপ্রিল গিয়ে অবৈধভাবে দখল করা অংশ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্ত ফারজানা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে যথারিতি তার কাজ চালিয়ে যান।
মানববন্ধনে অংশ গ্রহনকারী কৃষক হাসেম বলেন, তোরাবগঞ্জ ও চর লরেঞ্চ ইউনিয়নকে বিভক্তকারী তুলাতুলি খাল। দীর্ঘ প্রায় ৭০-৮০ বছরের পুরানো খালটি দিয়ে প্রায় ১০-১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার পানি নিষ্কাশন হয়। খালটি এলাকার ঐতিহ্যেরর সাথে মিশে রয়েছে।
দৈনিক আজকের পত্রিকার কমলনগর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ ইব্রাহীম জানান, ফারজানা কর্তৃক অব্যাহত ভাবে অবৈধ খাল দখলের নিউজ প্রকাশ করায় ফারজানা আক্তার আমিসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ। তিনি আরো বলেন, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেই সাংবাদিকরা খারাপ হয়ে যায়। আমরা কোন দখলদারদের ভয় পাই না, আমাদের কলম চলবে।
তোরাবগঞ্জ এলাকার দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফজলুল কাদের জানান, তুলাতলি খালটি তোরাবগঞ্জ ও চর লরেঞ্চ ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে। মুসারখাল থেকে কাটাকালী খালি খাল পর্যন্ত খালটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৮ কিলোমিাটার। এ খালের বিভিন্ন অংশে ১৫জন অবৈধ দখলদার রয়েছে। দখলের বিষয়ে বলার পর তারা আমাকেও মামলার হুমকি দিয়েছিল। এ খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন ও সেচ কাজ করার জন্য বর্তমানে খালটি খনন করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তোরাবগঞ্জ দখল হয়ে যাওয়া এলাকায় খনন শুরু হবে। ২০২৬ সালের ইরি বরো মৌসুমে এ খাল দিয়ে পানি নিয়ে তোরাবগঞ্জ ও চর লরেঞ্চ এলাকার ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় চাষাবাদ করা হবে সে লক্ষ্যে কাজ করছে বিএডিসি। এলাকার বৃহৎ স্বার্থে এখানে দখলমুক্ত করা জরুরি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আবু নূর সেলিম বলেন, আমাদের সমাজে দূর্নীতি রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করেছে। যার মধ্যে অন্যতম সরকারি সম্পাদ দখল। এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকতে হবে। অবৈধ স্থাপনাটি ভেঙ্গে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
জানতে চাইলে অবৈধ দখলকারী ফারজানা আক্তার বলেন, আমার কাগজপত্র সঠিক। আমি আমার জায়গায় দোকানগর করছি। এসিল্যান্ড কোন কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করে কাজ বন্ধ রাখতে বলছে।
এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরাফাত হোসাইন বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে গত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা অংশের স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু ফারজানা যেহেতু শুনেনি তাহলে দুই এক দিনের খালের জায়গা উদ্ধার করা হবে।