রবিবার ● ২০ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » জাতীয় » ‘তদন্ত কমিটি গঠনে হলেও নেই অগ্রগতি’ কমলনগরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
‘তদন্ত কমিটি গঠনে হলেও নেই অগ্রগতি’ কমলনগরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন আহমেদ বাহারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগে রয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখা যায়নি।
জানা যায়, ২০১৭ সালে কামাল উদ্দিন তার ভাতিজা তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফয়সাল আহমেদ রতন সভাপতি থাকাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান।
সে থেকেই তার অনিয়ম দুর্নীতি শুরু হয়। এরপর তার ভাগিনা উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পিকে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনীত করেন তিনি। তারপর থেকে প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন বিদ্যালয়টিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। এবং বিদ্যালয়ের সব ধরনের আয়-ব্যায় নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। পরিবারের আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাবের কারণে কোন শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী তার বিভিন্ন অর্থ কেলেঙ্কারি, অনিয়ম ও দুর্নীতি বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করেনি। সরকার পতনের পর চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন অনিয়ম ও তার স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করে। ওই দিন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস সরেজমিনে গিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের সাথে কথা বলেন এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন। পরে ১১ সেপ্টেম্বর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহাকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
তদন্ত কমিটিকে ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্ত তদন্তের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মৎস্য কর্মকর্তা ২২ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। এর পর ৩ অক্টোবর আবারো বিদ্যালয় গিয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য গোলাম হোসেন মিয়া জানান, তদন্ত কমিটি গত প্রায় দেড় মাসে মাত্র ২ দিন বিদ্যালয়ে এসেছিল। ২ দিনই আমরা উপস্থিত ছিলাম। প্রথম দিন সবার স্বাক্ষাতকার নিয়েছিলো। ২য় দিন ২০২৪ সালের জানুয়ারী থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ৭ মাসের মধ্যে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রী ভর্তির ফি, টিউশন ফি, নির্বাচনী ও ষান্মাষিক পরীক্ষার ফির হিসেব দেখেন। এ ৭ মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আয় হয় বলে প্রতিষ্ঠানের রশিদ বই থেকে জানা গেছে। তবে উক্ত আয়ের প্রায় অর্ধেক টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংকে জমা হয়নি বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ কিভাবে খরচ হয়েছে তাও দেখার সুযোগ হয়নি। এ সদস্য আশংকা প্রকাশ করে জানান, গত ৬-৭ বছরের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্ত মাত্র ৭ মাসের ২-৩ খাতের আয় যাচাই করতে প্রায় দেড়মাস শেষ। তবে ৬-৭ বছরের হিসেবে দেখতে কত দিন লাগবে ? এমন তদন্তের ভবিষ্যত নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, ৭ মাসে যদি ৭-৮ লাখ টাকার হিসেব না পাওয়া যায় তবে সে হিসেবে গত ৭ বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার অনিয়ম রয়েছে বলে তিনি ধারনা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা বলেন, নিজের ডিপার্টমেন্টাল বিভিন্ন কর্ম ব্যস্ততার কারণে তদন্তে একটু দেরি হয়েছে। আমরা ২০২৪ সালের ৭ মাসের হিসেব দেখেছি। সে আলোকে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন তদন্ত প্রতিবেদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।