শিরোনাম:
ঢাকা, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
---

Newsadvance24
শনিবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন আশরাফ উদ্দিন নিজান
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন আশরাফ উদ্দিন নিজান
৮০০ বার পঠিত
শনিবার ● ২৬ আগস্ট ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন আশরাফ উদ্দিন নিজান

নিজস্ব  প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স

---

কমলনগর  (লক্ষ্মীপুর) : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও শরীক দলের এখন পর্যন্ত নির্বাচন মুখী কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও ইতোমধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা বিএনপির সদস্য। গত কয়েকদিন ধরে তিনি কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় দলীয় মৃত নেতা-কর্মীদের কবর জিয়ারত, সভা-সমাবেশসহ স্থানীয়দের সঙ্গে গণসংযোগ করেন। পরে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রামগতির রামদয়াল এলাকায় নিজ বাসভবনে দীর্ঘ বক্তব্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন আশরাফ উদ্দিন নিজান।
ওই সময় বিএনপির শরীক দলের শীর্ষ নেতাদের সমালোচনাও করেন তিনি। তিনি বলেন, কাদের সিদ্দীকি, সুলতান মুনসুর, কামাল হোসেন, আ.স.ম রবসহ শরীক দলে যারাই আছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। এরা কেউই বিএনপির না। এমনকি এরশাদ সরকারের গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা আ.স.ম রবের নাম উল্লেখ করেও তিনি সমালোচনা করেন। তার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তার বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের প্রস্তুতি যেমন থাকবে, ভোটের প্রস্তুতিও তেমন থাকবে। কারণ হঠাৎ করে ভোট করা যায় না। আপনারা মনে করেন মানুষ ভোট দিয়ে দিবে? না। ভোটের একটা কারিশমা আছে। আমি তো একজন ক্যান্ডিডেট, গত ৮ বছর কেন্দ্রেই যেতে পারিনি। অতএব যেমনিভাবে আন্দোলনে সক্রিয় আছি, তদ্রূপ আমাদের আরও বেশি করে ভোটের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেনো শেখ হাসিনার পতন হলেই আমরা কাউকে না বলে ভোটে নেমে যেতে পারি। কারণ এখানে (লক্ষ্মীপুর-৪ আসন) বিএনপির আমিই একমাত্র প্রার্থী। এখানে আর কোনো ক্যান্ডিডেট নেই।
তিনি বলেন, কাদের সিদ্দিকি, সুলতান মুনসুর, কামাল হোসেন, আ.স.ম রব, তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। ১৯৮৬ সালে বিএনপি নির্বাচন করেনি, কিন্তু আ.স.ম রব ভোট করেছে। আরও কয়েকটি ভোটে হেরে যাচ্ছিল রব। ১৯৮৮ সালে এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দল হয়েছে আ.স.ম আব্দুর রব। ১৯৯৬ সালে বিএনপি এক সিটের জন্য সরকার গঠন করতে পারিনি। সে আবার শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে ওই সিট দিয়ে দিছে। অতএব এধরণের লোকদের আমরা গ্রহণ করা তো দূরের কথা, আশেপাশেও জায়গা দেবো না। তার তো আমার সঙ্গে জামানতই বাতিল হয়ে গেছে। আ.স.ম রবকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি শুনে রাখেন, আমি ইলেকশনে দাঁড়িয়ে গেছি, ইনশাআল্লাহ। আমি শ্রমিক সমাবেশ থেকে বলে দিলাম ইলেকশনে আমি দাঁড়িয়ে গেছি। এই বক্তব্য প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, দলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিএনপির সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দীন নিজানের এমন বক্তব্য নিয়ে জেলাজুড়ে এখন আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ সময়ে তার এমন বক্তব্যে বিএনপির অধিকাংশ নেতাই হতাশ হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’উপজেলার বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতারা বলছেন, এ আশরাফ উদ্দিন নিজান ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বিএনপিতে এসে রামগতি-কমলনগরের বিএনপির শুরু থেকে দল করা অনেক নেতাকে তিনি সাইড করে রেখেছেন। তার অনুসারীদের দিয়ে দিয়ে চলছে রাজনীতি। বিগত দিনের কোন আন্দোলন সংগ্রামে তাকে দেখা যায়নি।
কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রামগতি উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মনির চৌধুরীর শামিম বলেন, এখন আমাদের কর্মসূচি হচ্ছে সরকার হঠাও আন্দোলন। ওনি যে ঘোষণা দিয়েছেন এটা বিএনপির কোন সিদ্ধান্ত না। আমি আমি মনে করি এটা বিএনপির চলমান কর্মসূচির সাথে সাংঘর্ষিক।
জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সিনিয়র সহ সভাপতি ও রামগতি উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মীর আকতার হোসেন বাচ্ছু বলেন, সরকার নির্বাচন মুখী। একটা যেন তেন নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপির একটা অংশ নির্বাচনে আসবে। আশরাফ উদ্দিন নিজানের বক্তব্যে সে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনার অধীনে কোন ভাবেই আমরা নির্বাচনে যাবো না। কিন্তু তিনি সাত আট মাস আগে নির্বাচনে নেমে গেছেন বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন। এটা আমরা কোন ভাবেই মানতে পারি না। এছাড়া জোটের নেতা আ স ম রব নিয়ে ওনি যে বক্তব্য দিয়েছেন এটা কেউ সমর্থন করে না।
এ বিষয়ে জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল- জেএসডির কমলনগর উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব বলেন, সাবেক এমপি নিজান সাহেবের বক্তব্যে আমরাসহ রাজনৈতিক সচেতন মহল হতাশ হয়েছি। রাজনৈতিক এ সঙ্ককটময় মুহূর্ত উত্তরণের জন্য বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করছে। সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের মহূর্তে ওনার নির্বাচনের ঘোষণা আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমার মনে হয় ওনি বিএনপির আরেক উকিল আবদুস সাত্তার হবেন। কারণ নিজান সাহেব বিএনপি থেকে এমপি হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
রামগতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল বলেন, আশরাফ উদ্দিন নিজান যারা জন্ম থেকে বিএনপি করছে তাদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদী লোকজন দিয়ে নিজের একটা সাম্রাজ্যবাদী দল তৈরী করেছে। তার কথায় এটাও প্রমাণ হয়, সে যেন বিএনপির একচেটিয়া লিজ নিয়েছেন। আর শরীক দলের নেতাদের নিয়ে নিজান যে আজেবাজে কথা বলছে কেন্দ্রীয় নেতারা তদন্ত করলে বুজতে পারবে তার অহমিকা কোন পর্যায়ে চলে গেছে।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা সাবেক এমপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান ভিডিও বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমি বিএনপির একক প্রার্থী। গত নির্বাচনে আ স ম রবকে মনোনয়ন দিয়েছে হাইকমান্ড। কিন্তু ওনি কি করতে পেরেছে। এবার রব সাহেব ভিক্ষা চাইলেও দেওয়া হবে না। এছাড়া শরীক দলের অন্যান্য নেতাদের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা অতীতে বিএনপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এখনো করতে পারে এ জন্য নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে এ সব কথা বলা হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাড সৈয়দ মোহাম্মদ শামছুল আলম বলেন, এখন আমরা আন্দোলনে আছি; ভোটের কোন প্রশ্নই আসেনা। যুগপৎ আন্দোলনে ৩৪ দল একত্রিত হয়ে সরকার হঠাও কর্মসূচি চলছে; এ সময় আশরাফ উদ্দিন নিজান কি বলছে সেটা আমার দেখার বিষয় না। কারণ সে কিসের নেতা আমি জানি না। শরীক দলের নেতাদের মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি বিএনপির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য; এখন আমি যদি বলি তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়া কে? তাহলে বুজতে হবে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তার বেলায়ও আমি তাই বলবো”





আর্কাইভ