শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
---

Newsadvance24
রবিবার ● ১ অক্টোবর ২০২৩
প্রথম পাতা » জাতীয় » কমলনগরে ডাচবাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ১৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও, সুদের লোভে সর্বশান্ত শতাধিক মানুষ
প্রথম পাতা » জাতীয় » কমলনগরে ডাচবাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ১৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও, সুদের লোভে সর্বশান্ত শতাধিক মানুষ
৩৩০ বার পঠিত
রবিবার ● ১ অক্টোবর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

কমলনগরে ডাচবাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ১৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও, সুদের লোভে সর্বশান্ত শতাধিক মানুষ

নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স

---

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ বাজার এবং করইতোলা বাজার ডাচবাংলা ব্যাংক আউটলেটের এজেন্ট মহিউদ্দিন মাহমুদ প্রকাশ কুতুব উল্লাহ (৪০) শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ১৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যাক্তিগত ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে মোটা অঙ্কের সুদের লোভ দেখিয়ে এ সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর কোন খোঁজ না পাওয়ায় গ্রাহকরা দুটি এজেন্ট আউলেট শাখায় চেক নিয়ে ভিড় করতে দেখা গেছে।

এঘটনায় এজেন্ট আউটলেট দুটির সাময়িক ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে ডাচ ব্যাংক কর্তপক্ষ। শনিবার পর্যন্ত শাখা দুটির এজেন্টের কোন খবর জানাতে পারেনি তার স্বজনরা। মহিউদ্দিন মাহমুদ হাজিরহাট ইউনিয়নের চরজাঙ্গালিয়া গ্রামের হাবিব উল্লার ছেলে।

জানা যায়,মহি উদ্দিন মাহমুদের মালিকানাধীন লাবিব এন্টারপ্রাইজ ও তাজ এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধীন ডাচবাংলা ব্যাংকের দুটি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট পরিচালিত হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। যার মধ্যে চর লরেঞ্চ বাজার এজেন্ট আউটলেট টি মাস্টার এজেন্ট।

শনিবার (৩০সেপ্টেম্বর) চর লরেঞ্চ বাজারে গেলে স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, এজেন্ট ব্যাংকিং এর আড়ালে সুদের ব্যবসায় ব্যক্তিগত ব্ল্যাঙ্ক চেকের গ্যারান্টি ও উচ্চ সুদের লোভ দেখিয়ে স্থানীয় লোকজনের প্রায় ১৫কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা মহিউদ্দিন মাহমুদ। এতে নিজেদের পূজিঁ হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছে শতাধিক মানুষ।

চরলরেন্স এজেন্ট শাখায় জড়ো হওয়া লোকজনের অনেকে জানিয়েছে ব্যাংকের একাউন্টের বাহিরে ব্যক্তিগতভাবে এজেন্ট মহিউদ্দিন মাহমুদের নিকট বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রেখে মাসিক লাভ নিচ্ছিল। এখন এজেন্ট উধাও হওয়ার খবরে নিজেদের গচ্ছিত টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। তবে এরকম কতজন ব্যক্তি রয়েছে তার কোন সঠিক হিসেবে জানাতে পারেনি কেউ।

এসময় জুয়েল নামের একজনসহ কয়েকজন গ্রাহক জানায়, এজেন্ট শাখাটিতে তার একাউন্টে সরাসরি গচ্ছিত টাকা ঠিক আছে। তবে এজেন্ট মাহমুদের সাথে যারা ব্যক্তিগত ভাবে ব্ল্যাঙ্ক চেকের গ্যারান্টি ও স্ট্যাম্প গ্যারান্টিতে মাসিক উচ্চ লাভের আশায় টাকা জমা রেখেছিলেন মাহমুদ না ফিরলে তারা সর্বশান্ত হবেন।

স্থানীয় ভাবে বিভিন্নজন কোটি কোটি টাকার হিসেবে দিলেও শতাধিক ব্যাক্তির কাছ থেকে প্রায় ১৫কোটি টাকা নিয়ে কুতুব উল্লাহ উধাও হয়েছে বলে ধারনা করছেন এলাকাবাসী।

এজেন্টের প্রতারণায় পড়ে নিজেদের ক্ষতির আশংকা করে ডাচবাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নিকট নিজেদের অর্থের পরিমাণ এবং গ্যারান্টি হিসেবে ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছে বহু ব্যক্তি। এর মধ্যে চর লরেঞ্চ বাজারের একটি কম্পিউটার দোকানে এরকম ৭২টি চিঠি প্রিন্ট হয়েছে। ওই ৭২টি চিঠির মধ্যে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ৮১ লাখ টাকার মালিকও রয়েছে।

চর লরেঞ্চ গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মোসলেহ উদ্দিন জানায়, দীর্ঘদিন থেকে সুনামের সাথেব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল এজেন্ট শাখাটি। ভালো আচরণের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেন এজেন্ট। আমি প্রবাস থেকে দেশে আসার পর ৬ লাখ টাকার একটি ডিপিএস করি ওই শাখায়। এক পর্যায়ে মহিউদ্দিন মাহমুদ আমার ডিপিএসে জমানো অর্থগুলো উত্তোলন করে তার নিকট বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। এতে তিনি প্রতিমাসে লাখে ১২শ টাকার ঘোষণা দেয়। অনেক অনুরোধের পর আমি একদিন ফিঙ্গার দিয়ে আমার একাউন্টের ৬ লাখ টাকাতুলে তার হাতে দিই। পরে তিনি আমাকে গ্যারান্টি হিসেবে একটি চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে দেন। কয়েক মাস নিয়মিত লাভও আমাকে দিয়েছেন। এখন শুনি সে উধাও।

চর লরেঞ্চ গ্রামের ইউছুপ অন্য একটি ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ৭ লাখ এবং অন্যান্য আত্মীয়ের ২৩লাখ সহ মোট ৩০ লাখ মহিউদ্দিন মাহমুদের নিকট মাসিক লাখে ১২শ টাকা লাভে জমা রেখেছিল। গত কয়েক মাস লাভও পেয়েছেন। চর জাঙ্গালিয়ার হারুনের ৫ লাখ, খতিজার ৭লাখ ৯০হাজার, মাকছুদের ১লাখ ৫হাজার, জুয়েলের ১৭ লাখ, চর জগবন্ধুর তানিয়া আক্তারের ৪ লাখ সহ অসংখ্য স্থানীয় এলাকাবাসীর লাখ লাখ টাকা মহিউদ্দিন মাহমুদের নিকট মাসিক লাভে জমা রাখার খবর জানা গেছে। মহিউদ্দিন মাহমুদের উধাও হওয়ার খবরে তারা সবাই ভেঙ্গে পড়েছে।

ডাচবাংলা ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটের টেইলর জান্নাতুল ফেরদৌসী অভি জানায়, ঘটনার দিন বেলা ১টার দিকে আমার ৪ সহকর্মী দুপুরে খেতে বের হয়। আমি তখন একা ছিলাম ব্যাংকে। এসময় আমাদের মালিক কুতুব উল্লাহ বাহির থেকে এসে তার

ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন ও ব্যাংক কার্ড রেখে বলেছিল তাকে কেউ একজন বাহিরে ডাকছে। আমি ফোন ও কার্ড রেখে গেলাম। এর প্রায় ৪০ মিনিট পর তিনি অন্য একটি নাম্বার থেকে তার একটি ফোনে কল দেয়। ফোনটি আমি রিসিভ করি। তখন তিনি আমাকে

জানায়, অভি ২ জন লোক আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে, তারা আমার সাথে খারাপ আচরণ করছে। তুমি এ বিষয়টি আমার ভাইকে জানাও। এ কথা শুনেই আমি সাথে সাথে তার ভাই হারুন অর রশিদকে ঘটনাটি জানাই।

এদিকে মহিউদ্দিন মাহমুদের ভাই হারুন অর রশিদ জানায়, আমি অভির কল পাওয়ার সাথে সাথেই ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সহযোগীতা চাই। এবং করইতোলা থেকে চর লরেঞ্চ চলে যাই। ততক্ষণে থানা থেকে পুলিশ আসে। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার ভাইয়ের আর কোন খোঁজ নেই।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কম্পলাইন ম্যানেজার মোঃ মাইন উদ্দিন মিয়া জানান, এ ঘটনার পর থেকে এজেন্ট আউটলেট দুটি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে গ্রাহকরা যে কোন শাখা থেকে তাদের লেনদেন করতে পারবে। অন্যদিকে এজেন্ট মহিউদ্দিন মাহমুদ ব্যক্তিগত ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প দিয়ে ৬০-৭০ জনের প্রায় ৩ কোটি টাকার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ঘটনার দিন ৯৯৯ এর কল পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কোন প্রকার জিডি কিংবা কোন অভিযোগ করেনি। তবুও পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে।







আর্কাইভ