শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
---

Newsadvance24
শুক্রবার ● ৫ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » লক্ষ্মীপুরের তিন পরিবারের স্বপ্ন এখন ওমানের লাশঘরে বন্দী
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » লক্ষ্মীপুরের তিন পরিবারের স্বপ্ন এখন ওমানের লাশঘরে বন্দী
১২২২ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৫ নভেম্বর ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

লক্ষ্মীপুরের তিন পরিবারের স্বপ্ন এখন ওমানের লাশঘরে বন্দী

নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স

---

লক্ষ্মীপুর :  ২০ বছর আগে পরিবারে সুখের কথা চিন্তা করে ওমানে পাড়ি দেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মধ্য মকরধ্বজ গ্রামের শামছুল ইমলাম। ওই থেকে একটি খেঁজুর বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। এক মাস পর ছুটিতে বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। পরিবারের সদস্যরা জানান, শামছুল ইসমামের স্ত্রী, তিন মেয়ে ও একটি শিশু পুত্র রয়েছে। এর মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি। আর শিশু পুত্রটি জানে না তার বাবা বেঁচে নেই। তার বারা ফিরে আসবেন এটাই তার ধারণা। অবুঝ এ শিশুটি যখন তার বাবা ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে তখন তার বাবার মরদেহ বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে আছে ওমানের একটি মর্গে। পুরো পরিবার এখন শামছুল ইসলামের  শোকে পাথর।

এ ছাড়াও ১১ বছর আগে শামছুলের মাধ্যমে ওমান পাড়ি জমান জিল্লুর রহমান। বাড়িতে তার বাবা-মা, স্ত্রী ও চার সন্তান রয়েছে। সন্তাননদের মধ্যে তিন ছেলে এক মেয়ে। ছোট মেয়ে জান্নাতের বয়স মাত্র দেড় বছর। আর বড় ছেলে রায়হানের বয়স ১৫। স্থানীয় একটি মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে সে। মেঝো ছেলে রাসেল (১১) পড়ে চতুর্থ শেণিতে, আর চার বছরের রাশেদকে এখনো বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়নি। জিল্লুর রহমানের দেড় বছরের যে কন্যা সন্তান রয়েছে, তার সঙ্গে দেখা হয়নি তার। আর বাবার আদরও পাননি ছোট্ট শিশু জান্নাত। আর চার বয়র বয়সী শিশুপুত্র রাশেদও এখনো বুঝতে পারেনি তার বাবা নেই। ওই পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন জিল্লুর। মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা পাঠালে তা থেকে বৃদ্ধ বাবা এবং মায়ের ওষুধ খরচের পর বাকি টাকা দিয়ে টেনে টুনে সাত সদস্যের সংসার চলতো কোন মতে। ছেলেকে হারিয়ে এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন জিল্লুর রহমানের বাবা লুৎফর রহমান। চার বছর আগে পেশা ছেড়ে তিনি এখন বেকার ।

অন্যদিকে পরিবারের ছোট ছেলে আমজাদ হোসেন হৃদয়কে হারিয়ে তারা বাবা শহীদ উদ্দিনও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধার দেনা করে শামছুল ইসলামের মাধ্যমে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন। প্রায় দেড় বছরের মাথায় মারা গেলো ছেলেটি। তাই ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি তারা।

তিনি বলেন, ছেলেটা দেশে আসলে তাকে বিয়ে করিয়ে ঘরে বৌ আনার স্বপ্ন দেখতাম। আর এখন মরদেহের অপেক্ষায় আছি। এর চেয়ে বড় কষ্ট কি হতে পারে বলে তিনি কেঁদে ফেলেন।

 

---

সামছুল ইসলামের ভাই মো. মোস্তফা জানান, আমাদের পরিবারের তিনটি লাশ ওমানের মর্গে পড়ে আছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে লাশ পৌছে দেওয়া বা এ অসহায় পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা করা সম্ভব হয়নি। তিনি সরকারের কাছে ভাইসহ তিন জনের লাশ দ্রুত বাড়ি পৌছে দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।

সব কিছু ভুলে তিন পরিবার এখন স্বপ্ন দেখছেন নিহতদের লাশ দেশে আসবে। তাদের হাতে ওদের লাশ দাফন করবেন। তাদের স্বপ্ন এখন ওমানের লাশ ঘরে বন্দী। তাই তাদের পরিবারের দাবি সরকার প্রবাসি কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে শামছুল ইসলমা, জিল্লুর রহমান ও আমজাদ হোসেন হ্নদয়ের লাশ অতিদ্রুত তাদের পরিবারের কাছে যেন পৌছে দেওয়া হয়।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দ জানান, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোন চিঠিপত্র পাইনি। এ ছাড়া ওদের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশগুলো দেশে আনার বিষয়ে কোন আবেদন করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত (০৩ অক্টোবর) রবিবার ওমানের সাহামে উম্মে ওয়াদি লেবান পারপারে ঘূণিঝড় শাহিনের ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে তীব্র বৃষ্টিপাতে ওই এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। বাতাসের গতিবেগ  ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের ফলে ওই সময় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রায় দশ মিটার উঁচু ঢেউ তৈরি হয়। সব লোকদের ওমান সরকার উপকূলীয় এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হলেও শামছুল ইসলাম, জিল্লাল হোসেন ও আমজাদ হোসেন হ্নদয় রয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে এদেরকে বাতাস ও পানির স্রোতে ভেসে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়ভাবে খোঁজাখুঁজির পর এদের ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় তাদের মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। জিল্লাল শামছুল ইসলাম চাচাতো ভাই এবং হ্নদয় তার আপন ভাগিনা ।

 





আর্কাইভ