শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
---

Newsadvance24
শুক্রবার ● ১৮ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » হাজিরহাটে ত্রিমুখী লাড়াইয়ের সম্ভাবনা, চরফলকনে ভোটারদের মাঝে শঙ্কা ও নতুন নেতৃত্ব চায় তোরাবগঞ্জ
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » হাজিরহাটে ত্রিমুখী লাড়াইয়ের সম্ভাবনা, চরফলকনে ভোটারদের মাঝে শঙ্কা ও নতুন নেতৃত্ব চায় তোরাবগঞ্জ
১৩৩৫ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১৮ জুন ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

হাজিরহাটে ত্রিমুখী লাড়াইয়ের সম্ভাবনা, চরফলকনে ভোটারদের মাঝে শঙ্কা ও নতুন নেতৃত্ব চায় তোরাবগঞ্জ

ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স

 

---

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : প্রথম দফায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ৩টিতেই চষে বেড়াচ্ছেন সরকার দলীয় প্রার্থী, ইসলামী আন্দোলন  বাংলাদেশ, বিকল্পধারা, জাকের পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ভোটারদের মাঝে তেমন উৎসাহ না থাকলেও চায়ের টেবিল, পাড়া মহল্লায় ও বাড়ি বাড়ি  উপস্থিত হয়ে নিজ নিজ উদ্যোগে ভোটারদের মন গলানোর চেষ্টা করছেন সবাই। আবার কেউ কেউ নিজেদের পারিবারিক শক্তি, ব্যাক্তি ইমেজ জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন ভোটারদের মাঝে। আসছে ২১জুন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বানে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ চেষ্টায় কড়া নাড়ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে আ,লীগ প্রার্থীরা। থেমে নেই স্বতন্ত্র ও অন্যান্য প্রার্থীরাও। সবাই নিরবে নিজেদের জয়ের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন।

হাজিরহাট ইউনিয়ন

হাজিরহাট ইউনিয়নে আ’লীগ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিকল্পধারা ধারা বাংলাদেশ ও স্বতন্ত্রসহ ৯জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি নৌকার মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন, বিদ্রোহী প্রার্থী আকতার হোসেন মিলন (চশমা), মো শাহজাহান (মোটরসাইকেল) ও স্বতন্ত্র খোরশেদ আলম মেম্বার (অটোরিক্স)। সকল প্রার্থী মাঠে থাকলেও তিন জনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে ভোটারদের মধ্যে। সুষ্ঠ ভোটে ত্রিমুখী অবস্থানে রয়েছেন তারা। এদিকে সাধারণ ভোটারের মাঝে শঙ্কা বিগত ২০১৬সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য দল ভোটে অংশ গ্রহন করলেও প্রশাসন ও সরকার দলীয় লোকজন নৌকার প্রার্থী ছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য প্রার্থীদের কেন্দ্রে ভিড়তে দেননি। এ বছর এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কারণ এ বছর বিএনপি ভোটে অংশ নেননি। যার কারণে ভোট সুষ্ঠ হওয়ার ব্যাপরে আশাবাদি সচেতন মহল। আবার মানুষের ভোটাধিকার হরণ করার মত কোন পরিস্থিতি ঘটলে শক্ত জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে জানান অন্যান্য প্রার্থীরা।

সাবেক হাজিরহাট ইউনিয়নের আ’লীগের সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আকতার হোসেন মিলন জানান, গত ভোটে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও আ’লীগ ও প্রশাসন জোর করে তাকে ভোটের মাঠ থেকে উঠিয়ে দিয়েছেন। কথা ছিলো এ বছর তাকে নৌকার মনোনয়ন দিবে। কিন্তু দলের নীতি নির্ধারকরা তাদের ওয়াদা রক্ষা করতে পারেনি। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জনগনের ভোটে জিততে চান। সুষ্ঠ ভোটে জনগন যাকে পছন্দ করে ভোট দিবে। এতে হেরে গেলেও কোন আপত্তি নেই বলে জানান তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী খোরশেদ আলম জানান, গত ভোটে এ ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ড হতে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগনের আস্থা অর্জন করেছেন তিনি। এ বছর তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে হাজিরহাট ইউনিয়নের শোষিত-বঞ্চিতদের পাশে থেকে সেবা দিতে চান তিনি।

হাজিরহাট ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন জানান, প্রায় তিন যুগ পর হাজী বাড়ির একক আদিপত্য থেকে ২০১৬সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তার ইউনিয়নে সকল নাগরিকদের ট্যাক্স মওকুফ করেছেন। তার ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নসহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২৪ঘন্টা নরমাল ডেলিভারী সিস্টেম চালু করেছেন। ছোট বড় ৪৪টি রাস্তা করাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নতি করেছেন তিনি। এছাড়া তিনি পৌরসভার উন্নয়নের জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার তহবীল এনেছেন। আগামী দিনে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করতে চান তিনি। দীর্ঘদিন থেকে অবহেলীত এ ইউনিয়নে নাগরিক সেবার অনেক কাজ করায় ভোটারদের মাঝে ব্যাপক অলোচনায় রয়েছে তিনি। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আমার প্রতি সন্তুষ্ঠ হওয়ার কারণে আবারো আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি আবারো নির্বাচিত হয়ে হাজিরহাট ইউনিয়নবাসীর ভাগ্যান্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।”

ওই ইউনিয়নে ১২হাজার একশ’ ৮৫ পুরুষ ভোটার ও ১১হাজার চারশ’৭২ নারী ভোটার রয়েছে। বর্তমানে ১৬জন নারী সদস্য ও ৪৬জন সাধারণ সদস্য ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চরফলকন

২০১৬সালে প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে চরফলকন ইউনিয়ন ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ওই ইউনিয়নের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওই ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ বিলীন। আর তিনটি ওয়ার্ড বিলীন হওয়ার পথে। নির্বাচন বিধিমালা মোতাবেক কোন ইউনিয়নের কোন ওয়ার্ড বা অংশ নদীতে বিলীন হলে সীমানা নির্ধারণ হওয়া ছাড়া ভোট করা যাবে না বলে নির্দেশনা রয়েছে। এ অজুহাতে হাইকোর্টে একটি রিটও হয়েছে। তাই যে কোন সময় ভোট বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে ভোটারদের মাঝে শঙ্কা রয়েছে।

জানা যায় চরফলকন ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী হারুনুর রশিদ এ ভোটে অংশ নেননি। এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন বাঘা গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোট করতে গেলে প্রশাসন ও সরকার দলীয় লোকজন চাপ প্রয়োগ করে ভোটের মাঠ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়। এ বছর তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঝে রয়েছেন। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক সাজ্জাদুর রহমান ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টিসহ আটজন প্রার্থী থাকলেও এ দু’জনের মধ্যে লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যদি ভোট হয় যে প্রার্থীই জিতুক তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সুষ্ঠ ভোট হউক এটা ভোটারদের প্রাণের দাবি। তাই প্রথম ধাপের এ নির্বাচন জনগনের আস্থা অর্জনের ভোট হবে এ প্রত্যাশা প্রশাসনের কাছে সচেতন মহলের।

চরফলকন ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংবাদিক সাজ্জাদুর রহমান জানান, ভাঙনকবলীত চরফলকন ইউনিয়ন দীর্ঘ দিন থেকে অবহেলীত। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি চরফলকনবাসী নাগরিক সেবা নিশ্চিতসহ সকল মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যেতে চান। সরকারের প্রথম ধাপের এ নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠ হয়; তিনি প্রশাসনের কাছে এ দাবি জানান।

সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন বাঘা জানান, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী তাকে যোগ্য মনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। জনগন তাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুখ উজ্জল করবে এ ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদি।

ওই ইউনিয়নে ৭হাজার চারশ’ ৭১ পুরুষ ভোটার ও ৭হাজার ৯৫ নারী ভোটার রয়েছে। বর্তমানে ১৩জন নারী সদস্য ও ৪৪জন সাধারণ সদস্য ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তোরাবগঞ্জ

উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন ফয়সাল আহমেদ রতন। এর আগে তার দাদা একেএম ফজুলল হক পরে বাবা মহি উদ্দিন আহমেদ সেলিম দীর্ঘদিন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রতন নৌকার বিপক্ষে ভোট করায় দল এবার তাকে নৌকার মনোনয়ন দেয়নি। নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে (ঘোড়া প্রতীক) ভোটে অংশ নিয়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রতনের খালতো ভাই সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর্জা আশরাফুর জামান রাসেল নৌকার মনোনয়ন নিয়ে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ৬ প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও দুই খালতো ভাইয়ের ভোট যুদ্ধে এ ইউনিয়নে ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। উভয় আ’লীগ পরিবারের সদস্য হলেও বর্তমান সময়ে বিএনপিসহ অন্যান্য দল নৌকার পক্ষে ভোট করতে দেখা যাচ্ছে। ভোটারদের দাবি দীর্ঘ দিন রতন পরিবারের কাছে ওই এলাকার জনগন জিম্মি ছিলো। এ সুযোগে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হতে চায় তারা। আবার বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ রতন আ’লীগসহ কিছু শ্রেণির কাছে গ্রহন যোগ্যতা হারালেও সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহন যোগ্যতা অনেক বেশি রয়েছে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি নৌকা ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোট করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে চান। এ পরিস্থিতে যে কোন মূল্যে নৌকাকে জিতাতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামীগ মাঠে তৎপর রয়েছেন। এদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়সাল আহদে রতন সুষ্ঠ ভোটের জন্য প্রশাসানসহ বিভিন্ন মহলের কাছে ধরণা দিচ্ছেন। বর্তমান সময়ে দুই খালতো ভাইয়ের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং শক্তি জানান দিতে প্রতিদিনই কোননা কোন স্থানে হাঙ্গামার ঘটনা ঘটছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ রতন জানান, জনগনের ভোটে যে জিতুক তার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু জনগনের ভোটাধিকার হরণ করে কেউ জিততে চাইলে তোরাবগঞ্জের জনগন তা মেনে নিবে না।

নৌকার মনোনীত প্রার্থী মীর্জা আশরাফুর জামান রাসেল জানান, দীর্ঘ দিন থেকে রতন পরিবারের কাছে তোরাবগঞ্জের সাধারণ মানুষ জিম্মি ছিলো। তারা এলাকার মানুষকে কখনো মূল্যায়ন করেননি। “এবছর আমি নৌকার মনোনয়ন নিয়ে আসলে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ আমার জয়ের লক্ষে এক হয়ে মাঠে কাজ করছেন। কোন অপশক্তি আমার জয় ঠেকাতে পারবেনা বলে তিনি অরো বলেন।”

ওই ইউনিয়নে ৮হাজার চারশ’ ৯৭ পুরুষ ভোটার ও ৮হাজার একশ’১৮ নারী ভোটার রয়েছে। বর্তমানে ১৪জন নারী সদস্য ও ৩৫জন সাধারণ সদস্য ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

 

 





আর্কাইভ